রাজশাহী
Published :
23-02-2024
07:16:44pm
Total Reader: 45
* ধরণ পাল্টেছে রোগ-ব্যাধির
রাজশাহী অফিস : সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহীতে শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে শিশুদের জন্য নির্ধারিত বেডের বিপরীতে তিনগুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়াও বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও শিশুরোগীর সংখ্যা বেড়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দেশের অনেক এন্টিবায়োটি রোগীদের ওপর কাজ করছে না। তাছাড়া সামান্য জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত শিশুদের প্রয়োজন পড়ছে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ)। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরাও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
রাজশাহীতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ও ১৭ ফেব্রুয়ারি একই পরিবারের দুই জন শিশু মারা যাবার পর তাদের মৃত্যুর কারণ এখন পর্যন্ত নির্ণয় করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। বাবা-মা সহ মৃত শিশুর নমুনা সংগ্রহ করা হলেও রোগ নির্ণয়ে এখনও ১০ থেকে ১৫ দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এমন অবস্থায় নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন তারা। এজন্য চিকিৎসকদের সতর্কতার সাথে রোগীদের পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের দেয়া তথ্য মতে, শীত বা গ্রীষ্ম সমসময়ই রামেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশি থাকে। তবে শীতের সময় শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, হাপানি, ডায়রিয়া ও জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই বছরেও একই চিত্র। হাসপাতালে নির্ধারিত তিনটি শিশু ওয়ার্ডে ১৫০ টি বেড রয়েছে। যার বিপরীতে ভর্তি শিশু রোগী সংখ্যা প্রায় ৫০০।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ১০ নং শিশু ওয়ার্ডে ৩৪ টি বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ২০০ জন। এছাড়াও ১ হাজার ২০০ বেডের এই হাসপাতালটির ৬০টি ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার রোগী ভর্তি ছিলেন মোট ২ হাজার ৭৮১ জন। প্রতিদিন গড়ে যে সংখ্যক চিকিৎসাধীন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন তার দ্বিগুণ রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহিদা ইয়াসমিন বলেন, নতুন নতুন ভাইরাসতো আসতেই পারে। করোনা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এছাড়াও পুরাতন ভাইরাস-ব্যকটেরিয়া তার রূপ পরিবর্তন করছে। নিউমোনিয়া সহ শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ ও হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার আগে এমন রোগীর সংখ্যা এক দিকে যেমন কম ছিল; তেমনি এসব রোগীদের সিভিআর বা গুরুতর হবার হার কম ছিল। তবে এখন সামান্য জ্বরে আক্রান্ত শিশুদেরও আইসিইউ লাগছে। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া তার রূপ পাল্টেছে বলে মনে হচ্ছে।
এ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারাচ্ছে উল্লেখ করে এই চিকিৎসক আরও জানান, তাছাড়া এ্যন্টিবায়েটিক একটা বড় কারণ। এসব ওষুধ ড্রাগ রেজিটেন্স হয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু এন্টিবায়োটিক একেবারেই কাজ করছে না। একটা এন্টিবায়োটিক যখন ড্রাগ রেজিটেন্স হয়ে পড়ছে তখন হায়ার এন্টিবায়োটিকে যেতে হচ্ছে। আমাদের হাতে আর কতটিইবা এন্টিবায়োটিক আছে। দেশে এর সংখ্যাও সীমিত। এসব আমাদের মতো চিকিৎসকদের ভাবিয়ে তুলছে।
রামেকের মাইক্রোবায়োলজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. ফয়সল আলম বলেন, বর্তমানে শিশুদের মধ্যে নিউমনিয়া, টাইফয়েড, ডায়রিয়া ও জন্ডিসের (হেপাটাইটিস-এ) মতো রোগের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পেলেও মৃত্যুর হার কম। তবে একই পরিবারের দুই জন শিশু মারা যাবার পর তাদের মৃত্যুর কারণ এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। তাদের মৃত্যুর কারণ যদি ভাইরাস হয়ে থাকে তবে তা চিহ্নিত করাটা জরুরী। পুরোনো ভাইরাস তাদের মারা যাবার কারণ হতে পারে না। তাছাড়া এটা যদি ছোঁয়াচে হয় তবে তা হবে আরও দুশ্চিন্তার কারণ। একেকটি ভাইরাসের জন্য একের ধরণের স্যাম্পল পরীক্ষা করতে হয়। পরীক্ষায় বেশিরভাগই টাইফয়েড ধরা পড়ছে। নোবেল (নতুন বা বিশেষ) ভাইরাস চিহ্নিতের জন্য দেশের মধ্যে তেমন কোন পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। এসন নিয়ে আমেরিকার সিডিসি কাজ করে। আমাদের আইইডিসিআর এটা নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে।
রোগের প্রধান কারণ পানি ও বাতাস বলে জানান এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, নিইমনিয়া বাতাস থেকে বিস্তার লাভ করে। জন্ডিস ও টাইফয়েড পানিবাহিত রোগ। ওয়াসার সোয়ারেজের পানি লিক করছে কি না? তাছাড়া বোতলজাত পানি নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। আমরা ওয়াসাকে বিষয়গুলো দেখতে অনুরোধ করেছি।
রামেকের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. নওশাদ আলী বলেন, রোগের প্যাটার্ন বদলাচ্ছে। আক্রান্তকারী জীবাণূও পরিবর্তন হচ্ছে। কোভিড, ডেঙ্গু ও নিপাহ এগুলো ভাইরাসজনিত রোগ। সম্প্রতি একই পরিবারের দুই শিশু মারা গেছে। আমরা ভেবেছিলাম তারা নিপাহ ভাইরাসে মারা গেছে। পরবর্তিতে দেখা গেলো নিপাহ নয়। এটা আমাদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছে। একটা রোগের প্যাটার্ন জানা থাকলে আমাদের চিকিৎসা দিতে সুবিধা হয়। এখন যে কোন জ্বর হলেই সতর্ক হতে হবে। এখন তো সামান্য জ্ব-সর্দি বা খিঁচুনি নিয়ে শিশুরা ভর্তি হলেও আমরা ডাক্তাররাও ভয় পেয়ে যাচ্ছি। সতর্কতার সাথে রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছি। এমন কেস হতে থাকলে আমাদেরকে পৃথক প্রস্তুতি নিতেই হবে। এর জন্য অবশ্যই পৃথক গবেষণা করতে হবে।
এসংক্রান্ত আরো সংবাদ : স্বাস্থ্য
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার চার পাশে ঘটে যাওয়া সংবাদ উপযোগী যে কোন ঘটনার ছবি বা ভুক্তভোগী ও সম্পৃক্তদের মোবাইল নম্বর আমাদের পাঠাতে পারেন।
সম্পাদক : রাজু আহমেদ
বার্তাকক্ষ
এসোসিয়েশন ভবন
৬১০০, রাজশাহী, বাংলাদেশ।
newsdailyrajshahi@gmail.com
call@ 01750142903